September 9, 2024, 3:59 am
ভ্যালোর যাওয়ার রাস্তা ১টাই। বিকল্প রাস্তা দিয়ে যদি আসেন হয়রানী একই মনে হয় আমার কাছে। আচ্ছা যাক সে কথা চলুন ভ্যালোর যাই।ফ্লাইটে যাওয়ার জন্য কলকাতা দমদম(নেতাজী সুভাস চন্দ্র বোস এয়ারপোর্ট থেকে প্রথমে চেন্নাই। তারপর সেখান থেকে টেক্সি নিয়ে স্টেশনে আসুন। স্টেশন থেকে কাঠপাডি ট্রেন ধরে কাঠপডি আসুন। কাঠপডি স্টেশনে নেমে অটো(ডিজেল) উঠে ডাইরেক্ট সি.এম.সি –তে আসতে পারেন। ভাড়া ৬০টাকা।
ঝামেলা মুক্তভাবে ভ্যালোর পৌছানোর জন্য হাওড়া স্টেশন থেকে বেঙ্গালুর/কেরালার ট্রেন ধরুন।টিকেট আগেই করে রাখতে হবে। স্টেশনে কোন টিকেট পাওয়া যাবে না। ট্রেনে উঠারপর ডাইরেক্ট কাঠপডি নেমে যাবেন। সেখান থেকে অটোতে সি.এম.সি আসবেন।এক্ষেত্রে মোট ভাড়া ১২১০ থেকে ৩২০০টাকা পর্যন্ত ফেয়ার পাবেন।মোট যাত্রা কাল ৩০ থেকে ৩৪ঘন্টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
সি.এম.সি-তে যাওয়ার জন্য সকাল সকাল প্রস্তুতি নিতে হবে। সবচেয়ে ভাল হয় কলকাতা নেমে ডাক্তারের সিরিয়াল নিয়ে রওয়ানা দেয়া। অথবা তার আগেই সিরিয়াল নিয়ে রাখা।যদি সিরিয়াল নেয়া না হয় তাহলে সকালে যে কোন কম্পিউটার দোকান থেকে আপনার সিরিয়ালের জন্য অনলাইন ফর্ম পুরণ করে নিন। তারপর সি.এম.সি মোড় থেকে কাঠপডির দিকে যে রোডটা গেছে সেদিকে ৯০০বি কাউন্টার রয়েছে। সেখানে শুধু বিদেশী রুগিদের জন্য সেবা প্রদান করা হয়।সেখানে আপনার অনলাইন ফর্ম, ছবি, পাসপোর্ট ভিসির ফটোকপি(জেরোজ কপি) নিয়ে সিরিয়ালের জন্য চেয়ারগুলোতে বসুন। প্রথমে ১নং কাউন্টার তারপর ২নং কাউন্টার তারপর ক্যাশকাউন্টারের টাকা জমাদিয়ে ডাক্তারের সিরিয়াল নিশ্চিত করুন।সর্বনিম্ন ৫দিনের আগে কোন সিরিয়াল পাবেন না। যার কারণে ভালভাবে থাকার প্রস্তুতি নিয়ে যাবেন।
যদি অনলাইনে পূর্বে সিরিয়াল নিয়ে থাকেন সেক্ষেত্রেও আপনি ৯০০বি বিল্ডিং এর কাউন্টার গিয়ে আপনার উপস্থিতি নিশ্চিত করুন। তবে এখানে ১নং কাউন্টারেই আপনার সব কাজ হয়ে যাবে। ২নং ও ক্যাশ কাউন্টারের কোন কাজ নেই এখানে।
একটা জিনিস সবসময় মনে রাখবেন। আপনি ক্যাশ কাউন্টারে টাকা জমা দেয়ার সময় ক্রিসকার্ড একবারেই কিনে নেবেন।কার্ডের মূল্য ৩০টাকা। আনলিমিটেড এক্টিভিশন কোন ট্রানজেশন ফি নেই, বাৎসরিক কোন চার্জও নেই। তাছাড়া আপনি ইন্ডিয়ায় যতটাকা নিয়ে যান না কেন, ওখানে পৌছে সব টাকা ক্রিসকার্ডে লোড করে রাখুন। এতে করে আপনার সুবিধা হলো, টাকা হারানোর ঝামেলা নেই, হাসপাতালে খরচেরও ঝামেলা নেই। ডাক্তার এপোয়েন্টমেন্ট ও ক্লিনিকেল টেস্টেরও কোন ঝামেলা নেই। কার্ড দিয়ে টাকা পে করতে পারবেন এবং বড় লাইনেও দাড়াতে হবে না।তাছাড়া টেস্ট করার সময় আপনার কার্ড ছাড়া কোন সেম্পল গ্রহণ করবে না, তখন আবার কার্ড করার জন্য যেতে হবে।
এবার ক্যাশ কাউন্টার থেকে পাওয়া ক্যাশ রিসিভটাতে ভালকরে লক্ষ্য করুন। বুঝতে না পারলে কাউন্টার থেকে বুঝে নিন।বুঝার বিষয় হলো, আপনি কোন বিল্ডিং-এ ডাক্তার দেখাবেন, সেটা লিখা রয়েছে। যেমন-Building: OPD, Report to MRO Counter:২.০০. or IP Building, Room:220। যেখানে এম.আর.ও কাউন্টারের কথা বলবে সেখানে সরাসরি কাউন্টারে গিয়ে রিপোর্ট করবেন। তবে লক্ষ্য করুন-আপনি যেদিন সিরিয়ালের জন্য আবেদন করলেন, তার থেকে ৪/৫/৬দিন পর সিরিয়াল হতে পারে।এজন্য আপনার যতেষ্ঠ ধৈর্য্যের পরিচয় সি.এম.সিতে দিতে হবে।
এবার ডাক্তার দেখানোর দিন-
দিন তারিখ ও সময় অনুযায়ী যথাযথ বিল্ডিং সিকিউরিটিদের জিজ্ঞাসা করে জেনে নিন।এরপর আপনার নাম এম.আর.ও কাউন্টারে এন্ট্রি দিয়ে পাশের রুমে বসতে বলবে। নাম ধরে ডাকলে আপনি ভেতরে যাবেন। যদি আপনার স্লিপে রুম নাম্বার থাকে তাহলে সরাসরি ঐরুম গিয়ে আপনার টোকেন নাম্বার ও রুম নাম্বার আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন্। আপনার সিরিয়াল আসলে সেই ডাক্তারের রুমে প্রবেশ করুন।
প্রশ্ন হলো- আপনি যদি বাংলা ডাক্তার না পান তাহলে কি করবেন? অথবা আপনি হিন্দি বা ইংরেজি কিছু জানেন না সেক্ষেত্রে আপনার করনিয় কি ? যেখানে অপেক্ষা করছিলেন, আপনার সাথে অনেক রুগি সেখানে অপেক্ষা করছিলো। তাদের সাথে আলোচনা করে একজনকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করুন। এতে করে হবে কি, আপনার কথা ডাক্তারের সামনে উনি উপস্থাপন করতে পারবেন। দুজন একসাথে ঢুকলে কোন সমস্যা নেই। যদি সেটা প্রাইভেট হোক বা জেনারেল হোক। ডাক্তারকে আপনার সমস্যা খুলে বলার পর ডাক্তার আপনাকে একটি লাল কাগজ ধরিয়ে দেবে।দেখবেন সেখানে মোট টাকার কথা লিখা আছে। এবার সেই টাকা জমা দিতে isscc বিল্ডিং এর ২/৩/৪কাউন্টারে ক্রিসকার্ড দিয়ে পেমেন্ট করুন। যদি ক্যাশ হয় ৭থেকে ১৩নং কাউন্টারের যেক কোন একটিতে টাকা নগদ জমা দিন।মনে রাখবেন তাড়াহুড়া করলে আপনার টাকা জমা নেবে না। ভাল হয় পেছনে ৭০/৮০জনের লাইনে খাড়ান। ০.৩০ঘন্টার মধ্যে হয়ে যাবে। কাউন্টারে লাল স্লিপটি দিলে টাকা নেয়ার পর আপনাকে প্রিন্ট করার কাগজ দেবে। সবগুলোতে হাতে লিখা বিল্ডিং ও রুম নাম্বার থাকবে। সেই অনুযায়ী আপনি উক্ত রুমে গিয়ে টেস্ট সেম্পল দিন। আরেকটা জিনিস মনে রাখবেন। যেখানেই সেম্পল দেন না কেন, সাথে সাথে জিজ্ঞাসা করে নেবেন রিপোর্ট কখন ডেলেভারি হতে পারে।
কিছু কিছূ টেস্টের জন্য আবার সিরিয়াল নিতে হয়। যেমন-এক্স-রে, ইউ.এস.জি. ই.সি.জি, এম.আর.আই, এন্ট্রোসকপি ইত্যাদি।টাকা জমা দেয়ার পর উক্ত ডিপার্টমেন্টে গিয়ে সিরিয়াল নিশ্চিত করুন। কোনটা ঐদিনেই হতে পারে কোনটা ৫/৬দিন পরে ডেট দিতে হতে পারে।সেই অনুপাতে উক্ত সময়ে উপস্থিত থাকুন।
সকল রিপোর্ট ডেলিভারী ডেট নিশ্চিত হওয়ার পর পরেই ডাক্তারের সিরিয়াল পুনরায় নিন। কারণ আপনি চাইলেই ডাক্তার দেখাতে পারবেন না। সিরিয়াল নেয়ার জন্য isscc বিল্ডিং এর ১/২ কাউন্টারে আপনার ক্রিস কার্ডটি দিলেই হবে।আপনার চাহিদা অনুযায়ী ৫দিন পরে যেকোন এদিন বলুন। সে অনুযায়ী পুনরায় ডেট দিয়ে স্লিপ দেবে। আবার ডাক্তারের এপোয়েন্টমেন্ট এর জন্য যে কোন ক্যাশ কাউন্টারে গিয়ে টাকা দিন এবং আরেকটি স্লিপ নিন। স্লিপে অবস্থানরত তারিখ, সময় স্থান অনুযায়ী উক্ত স্থানে হাজির হয়ে ডাক্তার দেখানোর জন্য প্রথমে এম.আর.ও কাউন্টারে রিপোর্ট করুন। তারপর ডাক্তারের সিরিয়াল নাম্বার পাবেন। নাম ও সিরিয়াল ধরে ডাকলে ভেতরে যাবেন।
রিপোর্ট অনলাইনে ডাক্তারে কাছে রুগির একাউন্টে জমা হয়ে যায়। তাই রুগীর রিপোর্টকপি পাওয়ার জন্য বিলের গায়ে নির্দেশনা দেখুন। বুঝতে না পালে যে কোন হেল্প ডেক্সে জিজ্ঞাসা করুন।
ডাক্তার আপনাকে প্রেসক্রাইপ করার পর আপনার ঔষধ বাইরে খুজার চেষ্টা না করে সরাসরি যেকোন সিকিউরিটিকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নিন ফার্মাসিটিক্যাল কাউন্টার কোনটা। বড় বড় বিল্ডিংগুলোতে প্রত্যেকটিতে ফার্মাসিটিক্যাল কাউন্টার রয়েছে। ওখানে দেখবেন-ক্যাশ কাউন্টার রয়েছে্। ক্যাশ কাউন্টারে প্রেসক্রিপশনটা জমা দিন, সাথে কতটাকা লাগবে সেটাও দিন নগদ/ক্রিসকার্ড।তারপর বসে সেখানেও অপেক্ষা করুন। কিছুক্ষণপর আপনার রুগির নাম বলবে। গিয়ে প্রেসক্রিপশনটা ও ঔষধগুলো নিন।
মনে রাখবেন নিয়মানুবর্তিতাই এখানকার মুল চিকিৎসা। তাড়াহুড়া করলে আপনার সিরিয়াল ইগনোর হতে পারে। পোষ্টটি শেয়ার করে সকলকে জানিয়ে দিন। সকলে হয়রানী থেকে কিছুটা মুক্তি পাবে।